News:

Follow us

আপনার সন্তান হোক আশাবাদী

শিশুর আত্মশক্তি ও বলিষ্ঠ চরিত্র গঠনের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো আশাবাদ। জীবনের প্রতি পদে পদে যে বাধা আসে, তা সামাল দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে শিশুকে অবশ্যই আশাবাদী হতে হবে। আশাবাদী (Optimism)  শিশুরা জীবনের কঠিন সময়গুলো সহজেই মোকাবেলা করতে পারে। তাছাড়া, আশাবাদী এই বৈশিষ্ট্যটি শিশু বয়স থেকেই তৈরি হতে থাকে। তাই, সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই আশাবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা জরুরী। এই আশাবাদী শিশু কিভাবে তৈরি করা যায়,  সে সম্পর্কে মা-বাবার করনীয়  আলোচনা করা হল।

মা-বাবার করণীয় (Role of Parents)

শিশুদের আশাবাদী মনোভাবকে সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করাই মা-বাবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শিশুরা জন্ম থেকেই আশাবাদী হয়ে থাকে। তারা সব কিছুই করতে পারবে বলে মনে করে। তাদের ‘পারব’ মনোভাবটি বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। তাই, মা-বাবার করণীয়র হলো শিশুদের এই আশাবাদী মনোভাবকে সর্বদা জাগিয়ে রাখা ও নীচের করনীয় কাজগুলো করা।

শিশুর ওপর বিশ্বাস (Trust Your Child)

সন্তানের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। আপনার কথা ও কাজে সে বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটান। আপনার এই আস্থা শিশুর নিজের প্রতি বিশ্বাসকে বাড়াবে এবং সে আশাবাদী হয়ে উঠবে। বিশ্বাসের সঙ্গে তাকে উৎসাহ দিন এবং বলুন, ‘চেষ্টা করো, তুমি পারবে।’

রোল মডেল (Role Model)

শিশু তার স্বভাবসুলভ গুণের কারণে পিতামাতা কে অনুকরণ ও অনুসরণ করে থাকে। যার দরুন, শিশুরা সর্বপ্রথম মা-বাবার আচরণের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই, আপনার শিশুকে আশাবাদী আচরণ ও মনোভাব দেখার সুযোগ দিন। প্রয়োজনে, শিশুদের আশাবাদী মানুষদের সংস্পর্শে নিয়ে আসুন।

স্বীকৃতি ও উদ্‌যাপন (Recognition and Celebration)

আপনার শিশুকে তার ভালো কাজের স্বীকৃতি দিন। তার যেকোনো ছোট বড় অর্জন, উন্নতি বা সফলতাকে সবাইমিলে উদ্‌যাপন করুন। কিছু মুহূর্ত সবাই মিলে আনন্দ প্রকাশ করুন বা মিষ্টি খাওয়া থেকে শুরু করে বড় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন পর্যন্ত করতে পারেন। বিষয়টির গুরুত্ব, সময় ও বয়সকে বিবেচনা করে উদ্‌যাপন করুন।

সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখান (Prize Dream)

আপনার শিশুর সাথে জীবনের বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা আলোচনা করুন। তাকে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত ও সাহায্য করুন। কিভাবে সেগুলো অর্জন করা সম্ভব, তাও আলোচনা করুন। সরাসরি সিদ্ধান্ত না দিয়ে তাকে চিন্তা করতে উৎসাহিত করুন। সপ্নের বিষয় সব সময় যে বড় বড় হতে হবে তা নয়; বরং জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও তার সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। পারিবারিক সিদ্ধান্ত বিষয়ে তাকে চিন্তা ও মতামত প্রকাশের সুযোগ দিন। যেমন-কিভাবে স্কুল শুরু করা যায়, কিভাবে নিজের কাজ নিজে গুছিয়ে করা যায় প্রভৃতি।

সফলতার গল্পকথা (Success Story)

শিশুদের বড় বড় মনিষীদের জীবনী পড়তে দিন অথবা গল্প করে শোনান। ছোট অবস্থান থেকে নিজ বুদ্ধি ও প্রচেষ্টায় তারা কিভাবে বাধাগুলোকে অতিক্রম করেছে, কিভাবে তারা বড় হয়েছে, সফল হয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করুন। এতে তাদের ভেতরে সাহস ও বড় হওয়ার সুপ্ত বাসনা তৈরি হবে।

প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব (Live Personality)

শিশুকে প্রাণবন্ত ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলুন। তাকে জীবনের বিভিন্ন দর্শন সম্পর্কে অবগত করুন ও শেখান। যেমন- ‘প্রতিটি দিনই নতুন এবং প্রতিটি নতুন দিন নতুন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে।’ আমাদের সেই সম্ভাবনাগুলো খুঁজে নিতে হয়, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’ ইত্যাদি। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা তার রয়েছে, শিশুর মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি করুন।

জীবন-দক্ষতা (Life Skill)

জীবনের জন্য অপরিহার্য দক্ষতাগুলো শিশুকে শেখান। যেমন- ফার্স্ট এইড স্কিল,  সামাজিক দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা, দ্বন্দ্ব নিরসন দক্ষতা, সমঝোতা করার দক্ষতা, স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কৌশল, রাগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রভৃতি জীবন-দক্ষতা ও কৌশল শিখিয়ে দিন। সাধারণত, এসমস্ত দক্ষতা ও কৌশল জানা থাকলে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী, আশাবাদী ও সফল হয়।

স্ব-মূল্যায়ন (self evaluation)

দিন শেষে শিশুর সফলতা ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে উৎসাহী করুন। সফল কাজগুলোতে উৎসাহ দিন ও ব্যর্থতা থাকলে সেখান থেকে কী শিক্ষণীয় তা নির্ণয় করতে শেখান। ব্যর্থতা থেকে ভবিষ্যতে এ রকম ক্ষেত্রে কী করলে সফল হওয়া যাবে তা শিখতে অনুপ্রাণিত করুন।

পরিশেষে বলা যায়, মা-বাবা তার সন্তানের উপর আস্থা রেখে, প্রয়োজনে রোল মডেল উপস্থাপন করে, ছোট ছোট কাজের স্বীকৃতি দিয়ে, সম্ভবাবনার স্বপ্ন দেখিয়ে, সফলতার গল্প শুনিয়ে, জীবন-দক্ষতা শিখিয়ে, কাজের মূল্যায়ন করে, সন্তানের প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলে একজন আশাবাদী মানুষ তৈরি করতে পারেন।

লেখকঃ তানজির আহম্মদ তুষার, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Search