News:

Follow us

ক্ষতিকর সেলফ ডেফিয়েটিং আচরণ

0Comments
0views

আমি দীর্ঘদিন ধরে অন্যর কাছে নিজেকে খাটো করে, নিজেকে নীচে নামিয়ে সবার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা করে আসছিলাম। সম্পর্কগুলো ঠিক থাকলেও কেন জানি তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারছিলাম না। অনেক সময় নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হতে লাগলছিল। বুঝতে পারছিলাম না কোনটা ঠিক না বেঠিক। এক মনোবিজ্ঞানীর সহায়তায় জানতে পারলাম যে ঐ আচরণগুলোর নাম আসলে সেলফ ডেফিয়েটিং আচরণ । অপরের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে এই আচরণ ভালো কাজ করে তবে, আত্মমর্যাদা ও মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য তা বেশ ক্ষতিকর। নীচে সেই আচরণ গুলো তুলে ধরলাম।  

১। এড়িয়ে চলা (Avoidance): আমি সাধারণত বেদনা বা আঘাত পেতে পারি এমন মানুষ কিংবা পরিস্থিতি সবসময় এড়িয়ে চলতে চাইতাম। এই ধরনের আচরণই হল একটি সেলফ ডেফিয়েটিং আচরণ । এই আচরণের কারণে আমি ঐ সমস্ত ব্যক্তির সাথে কাজে গড়িমসি করতাম, কাজে কম উৎসাহ পেতাম, কাজ শেষ করতে প্রয়োজনের তুলনায় কম চেষ্টা চালাতাম। ফলাফল, তাদের সাথে সম্পর্কের এবং  কাজের পারফর্মেন্সের অবনতি হতে লাগলো।   

২। পারফেক্টশনিস্ট (Perfectionist): অন্য সবার মত আমিও সবসময় নিখুঁতভাবে, সুচারু রুপে কাজে করতে চেষ্টা করতাম যদিও জানতাম বাস্তবে তা ১০০% করা প্রায় কখনই সম্ভব নয় তবুও চেষ্টা করতাম। এমন আচরণকে বলে পারফেক্টশনিস্ট আচরণ। দিনে দিনে আমার আত্মমর্যাদা (Self-Esteem) কমতে  থাকায় এই পারফেক্টশনিস্ট আচরণটি আরও বেশি করে করছিলাম। আর মনে হচ্ছিল, একদম নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু  বাস্তবে, ফলাফল আরও উল্টো হতে লাগলো,  এই ধরনের কাজ করতে যেয়ে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেতে থাকলো।

৩। লুকানো (Hiding): আমার মনের কিছু প্রকৃত রূপ বা সত্ত্বা ছিল যেগুলো প্রকাশ করতে লজ্জা ও অস্বস্তি বোধ করছিলাম। ঐ বিষয়গুলো যাতে কোনভাবে প্রকাশ না পায় তাই, ঐ প্রসঙ্গ এলে নিজেকে আড়াল করে রাখছিলাম। এধরণের আচরণকে ইংরেজিতে হাইডিং আচরণ বলে। নিজের  আত্ম পরিচয়ের ঘাটতি পুষিয়ে নিতেই নাকি মানুষ এই আচরণ করে। আমিও তাই আমার অন্যান্য সমস্যার সাথে সেক্সসুয়াল সমস্যা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা ও নতুন কারো সাথে মিশতে যাওয়ার সমস্যাগুও লুকিয়ে রাখতে যেয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম। ফলাফল, ধীরে ধীরে তাদের সাথে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে লাগলো, আমার শুভাকাংখি কমে যেতে লাগলো আর আমি হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করলাম।

৪। নিস্ক্রিয়তা (Passive ): আমি নিরিহ প্রকৃতির মানুষ এবং মনে হতো অন্যরা আমার থেকে বেশি বোঝে বেশি জানে তাই নিজের অধিকার আদায়ে সবসময় চুপ থাকতাম। অফিসের মিটিং এ কিংবা কোন আলোচনায় কোন এক পাশে হাত ও পা কোনাকনি করে কুঁজো হয়ে বসে থাকতাম। যেখানে কিছু কথা বলা প্রয়োজন সেখানেও চুপচাপ থাকতাম আর টেনশন প্রকাশ করতাম, মাঝে মাঝে কারণ ছাড়াই দুঃখ প্রকাশ করতাম এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার সাথে একমত প্রকাশ করতাম। এটি হল নিষ্ক্রিয়তা নামক সেলফ ডেফিয়েটিং আচরণ। এতে সবাইকে খুশি করতে যেয়ে নিজেকে মেরুদণ্ডহীন হিসেবে মনে হতে লাগলো। আত্মমর্যাদা বোধ আরও কমতে শুরু করলো। ফলাফল পরিবার,অফিস এমনকি সমাজেও আমার গুরুত্ব কমে যেতে লাগলো। 

৫। মনোযোগ আকর্ষণ (Attention-Seeking): এমন পরিস্থিতে আমি অপরের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠলাম। এক্ষেত্রে আমি সবসময় অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যেয়ে অতিরঞ্জিত বা অনুপযোগী অসামঞ্জস্য আচরণ করতে লাগলাম। এ ধরণের প্রচেষ্টাকে বলে  মনোযোগ আকর্ষণের প্রচেষ্টা।  অপর দিকে, সর্বদাই অপরের ইতিবাচক ফিডব্যাক পেতে চাইতাম না পেলে খারাপ লাগতো। যদিও অপরের মনোযোগ ও ফিডব্যক পেলে সাময়িক ভালো লাগতো কিন্তু পরে নিজেকে ছোট মনে হতে লাগলো।

এইসব কিছু,  আমার ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে, কর্ম জীবন, পারিবারিক জীবন ও সমাজ জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করলো। নিজের কাছে নিজে হীন মনে হতে লাগলো, আত্মবিশ্বাস কমে যেতে লাগলো, মাথায় সবসময় একটা চাপ অনুভব করতে লাগলাম, পরিবারের সবার সাথে সময় দিতে ভালো লাগছিল না, সহকর্মীদের সাথেও সম্পর্কের অবনতি হতে লাগলো, সমাজের লোকজনদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা কমে যেতে লাগলো।   

পরিস্থিতি যখন নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন হতাশ না হয়ে এক বন্ধুর পরামর্শে একজন মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিলাম।  তিনি জানালেন আমার আত্মমর্যাদা ও মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য উপরোক্ত সেলফ ডেফিয়েটিং আচরণগুলো বেশ ক্ষতিকরছিল এবং তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন। আমি অল্প দিনের মধ্যেই আমার হারানো আত্মমর্যাদা ও কাজের সঠিক মূল্যায়ন পেতে শুরু করলাম। বুঝলাম দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা, এড়িয়ে চলা ও নিজেকে আড়াল রাখার অভ্যাস  পরিত্যাগ করে সঠিক সময়ে  সঠিক কথা বলার অভ্যাস তৈরি করে করে মানসিকভাবে সুস্থ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করা সম্ভম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Search