মনের স্বাস্থ্য বা মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে আমাদের আচরনের পরি্র্তনের সাথে সাথে মনোজগতেও বিভিন্ন পরিবর্তন হয়ে থাকে। এই পরিবর্তনের কারণে আমাদের মনোবিজ্ঞানীরা বেশ কিছু্ নীচের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা বলেছেন। আমাদের স্বাভাবিক আচরণ ব্যহত হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক সম্পর্কের অবনতি হয়। নিজের যত্ন, পারাবারিক দায়িত্ব, পেশাগত দায়িত্ব ও দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়।
১) চিন্তার পরিবর্তনঃ মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে সর্ব প্রথম ব্যাক্তির চিন্তায় প্রভাব পড়ে। আমরা সাধারণত দিনে কয়েক ৭০ হাজার চিন্তা করে থাকি। মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে এই নেতিবাচক চিন্তাগুলো মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ফলে স্বাভাবিক ও সঠিকভাবে চিন্তাগুলো কাজ করতে পারে না। যার দরুন চিন্তাগুলো হয়ে যায় ত্রুটিপূর্ণ। মনের স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে মনোজগতে চিন্তার পরিবর্তন হয়।
২) ত্রুটিপূর্ণ প্রত্যক্ষঃ আমাদের চিন্তা ভাবনাগুলোই আমাদের আমাদের প্রত্যক্ষণকে প্রবাবিত করে। আমরা কি দেখব, কিভাবে দেখব অর্থাৎ একটা ঘটনাকে ইতিবাচকভাবে নেব না নেতিবাচক ভাবে দেখব তা নির্ভর করবে আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো ঐ মুহূর্তে ইতিবাচক না নেতিবাচক ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত, তার উপর। তাছাড়া এখানে আমার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতাও প্রভাব ফেলতে পারে তবে তাও নির্ভর করবে আপনি ঐ মুহূর্তে কোন চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত, ইতিবাচক না নেতিবাচক। কাজেই, মনের স্বাস্থ্ বা মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে একটি ঘটনাকে ব্যক্তি ত্রুটিপূর্ণ ভাবে ব্যাখ্যা করে।
৩) আবেগের পরিবর্তনঃ যখনই কোন ঘটনাকে আপনি ব্যখ্যা করে প্রত্যক্ষ করেন তা আপনার আবেগকে আলোড়িত করে। কোন ঘটনা ইতিবাচক ভাবে প্রত্যক্ষ করলে আমাদের মাঝে আনন্দ,হাসি, উৎফুল্লতা ও খুশির আবেগ যেমন প্রকাশ পায় তেমনি নেতিবাচক প্রত্যক্ষণ কষ্ট, দুঃখ, ক্ষোভ, নিরাশা প্রভৃতি তৈরি করে। আর মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে যেহেতু, নেতিবাচক চিন্তার কারণে ত্রুটিপূর্ণ প্রত্যক্ষ হয় আর তা নেতিবাচক আবেগের প্রকাশ ঘটায়। ফলে সঠিক জায়গায় আপনি সঠিক আবেগ প্রকাশ করতে না পারার কারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ি।
৪)শারীরিক পরিবর্তনঃ আমরা জানি আবেগের কারণে নানা শারীরিক পরিবর্তন হয়। যেমনঃ দুঃখে/কষ্টে যেমন চোখে পানি আসে তেমনি খুশিতে/আনন্দে মুখে হাসি চলে আসে। আবার ভয়ে বুক দুরু দুরু করে, হাত পা কাপে শরীরে ঘাম ঝরে প্রভৃতি। মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে আমাদের এই অহেতুক শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে যেটা ঐ সময়ে উপযোগী পরিবর্তন হবে না।
৫) আচরনের পরিবর্তনঃ মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে যেহেতু আমাদের নেতিবাচক চিন্তা থেকে নেতিবাচক প্রত্যক্ষণ হয় তার থেকে নেতিবাচক আবেগের উদ্রেক হয় এবং তা থেকে শারীরিক পরিবর্তন হয় পরিশেষে তা থেকে আমাদের স্বাভাবিক আচরণ ব্যহত হয়। অর্থাৎ যেখানে যেমন আচরণ করা প্রয়োজন সেখানে তেমন আচরণ করতে ব্যর্থ হই। পরিনামে কাজের পারফর্মেন্স ব্যহত হয়, দৈনন্দিন কার্যক্রম এলমেলো হয়ে যায়, স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে যায়, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়, পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয় ইত্যাদি।
কাজেই মানসিক স্বাস্থ্য (mental health) খারাপ হলে আমাদের চিন্তা জগত থেকে শুরু করে আচরনে স্বাভাবিকতা সবকিছুর উপর নেতিবাচক প্রবভাব পড়ে।