বিষণ্ণতা চিকিৎসায় মানসিক রোগের ডাক্তারেরা ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন। বিশেষতঃ মধ্যম ও গুরুতর বিষন্নতায় ঔষধ খাওয়ার বিকল্প নেই। তবে বিষন্নতা বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা নিজেরাও অনেক কিছু করতে পারি। নিজেদের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা বিষণ্ণতার লক্ষণ কমাতে পারি, আমাদের মন ভাল করতে পারি, মানসিক চাপ কমাতে পারি। বিষণ্ণতার সাথে খাপখাওয়ানোর মতো কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারি। ঔষধের পাশাপাশি এই কৌশল গুলো ব্যবহার করলে তা আমাদের লক্ষণ কমাতে ও একসময় ঔষধ ছাড়াই ভালো থাকতে সহায়তা করবে। আবার কতগুলো সামগ্রিক ভাবে মানসিক চাপ কমিয়ে বিষণ্ণতা বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যে করে।
নিজের চিন্তাগুলো লিখে ফেলুন
মাথায় কত ধরণের চিন্তাই না আমাদের আসে। বিষণ্ণতার রোগীদের মাথায় সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তা ঘুরে। কোন রকম যুক্তি বিচার না করেই তারা এই নেতিবাচক চিন্তা গুলো বিশ্বাস করে। একজন রোগী যেমন বলেছিলেন –‘আমার অতীত অন্ধকার ও ভবিষ্যৎ কুয়াশাচ্ছন্ন’। অন্যরা বললেন- ‘আমি একটা বাতিল ঘোড়া’। দুনিয়াটা এত কঠিন কেন? আমি এই দুনিয়ার উপযুক্ত না’। ‘আমার কোন যোগ্যতাই নেই’। ‘কেউ আমাকে বোঝেনা, ভালবাসে না। সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে’। -এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা করলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। অনেক সময় রোগী একদম গুটিয়ে যান ও শরীরেও দুর্বলতা অনুভব করেন। কাজেই বিষণ্ণতা টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতিবাচক চিন্তার বড় ধরনের ভূমিকা আছে। আমাদের উচিৎ আমাদের চিন্তাগুলো লিখে রাখা ও সেগুলো আসলেই কি যুক্তিসঙ্গত কিনা তাও মনে মনে বিচার করে দেখা।
নেতিবাচক কথা না বলা
যেগুলো শেষ হয় নেতিবাচক দিয়ে তাই নেতিবাচক কথা, তা বর্জন করুন। গ্লাসটি অর্ধেক খালি না বলে বলুন গ্লাসটি অর্ধেক ভরা। কারো সমালোচনা করতে চাইলে প্রথমে তার প্রাপ্য প্রশংসা করে তারপর মার্জিত ভাষায় আর কোথায় কোথায় তার উন্নতি করতে হবে তা বলুন। নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বলতে গেলে প্রথমে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ভালো কি কি দিয়েছেন তা স্বীকার করুন। তারপর ইতিবাচক ভাবে দুর্ভাগ্যের কথা বলুন। চরমপন্থি কথা বলবেন না। প্রতিটি বিষয়ের মাঝামাঝি মাত্রাগুলো লক্ষ্য করুন। ‘আমি আর কখনো পরীক্ষায় পাশ করবোনা’ – না বলে বলুন যে এবার আপনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন যা দুঃখজনক। অতীতেও বহুবার আপনি পরীক্ষায় পাশ করেছেন, আবারও ভবিষ্যতে পাশ করবেন এমন আশা রাখুন। মনে রাখবেন আপনার ভবিষ্যত বাণী করার ক্ষমতা তৈরী হয়নি।কাজেই কখনোই পারবেননা এমনটা বলার কোন মানে হয়না। যদি নেতিবাচক চিন্তায় আপনার মাথা ভরাও থাকে তবুও মুখে এগুলো বলা থেকে বিরত থাকুন। বার বার এগুলো বললে আপনার এই অযৌক্তিক চিন্তাগুলো আরো বেশী করে বিশ্বাস হতে শুরু করবে। যুক্তি নির্ভর হবার চেষ্টা করুন। ‘আমার কোন যোগ্যতা নেই’- এমন কথা বলবেননা। পৃথিবীতে এমন কোন সৃষ্টি নেই যার কোন যোগ্যতা নেই। আপনি কি অতীতে পরীক্ষায় পাশ করেননি? কখনো গুরুজনের সেবা করেননি? কারো কোন উপকারে আসেননি? মানুষ আপনার সম্পর্কে কি বলে? চট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেননা। আপনার কথার পক্ষে কি যুক্তি আর বিপক্ষে কি যুক্তি তা ভাবুন। যারা আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ তাদের থেকে তথ্য নিন। বিষণ্ণতার ফলে আপনার মাথা হয়তো গেছে- সেখানে খুজলেও হয়তো আর ইতিবাচক নজির পাওয়া যাচ্ছেনা। আপনার বাবাকে, মাকে, স্ত্রী, স্বামী, ছেলে, মেয়েকে, বন্ধুকে, বান্ধবীকে জিজ্ঞাসা করুন। বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলুন। তারা হয়তো আপনার নেতিবাচক চিন্তার বিপক্ষে অনেক প্রমাণ হাজির করতে পারবেন। অল্প নেতিবাচক প্রমানের ভিত্তিতে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না। সামগ্রিক বিবেচনা করে, অর্থাৎ ইতিবাচক ও নেতিবাচক সব প্রমাণ বিচবেচনা করে ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা করা ও কথা বলার চেষ্টা করুন। যেমন- বলতে পারেন, ‘আমি এবার ইংরেজী পরীক্ষায় ফেল করেছি যা দুঃখজনক। কিন্ত বাকি পরীক্ষাগুলোতেতো পাশ করেছি। ভাল ভাবে চেষ্টা করে আগামিবার সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমি পাশ করতে পারবো আশা রাখি’।
মনের মধ্যে শোকর রাখুন ও ধর্মে আস্থা রাখুন
অকৃতজ্ঞ হওয়া ভাল নয়। জীবন কি আপনার সাথে পুরোপুরি বিপরীত আচরণ করছে। আপনি কি কিছুই পাননি? সৃষ্টিকর্তার দানের উপর শোকর রাখলে মন ততটা খারাপ হবে না। তাছাড়া ধর্মবিশ্বাস আমাদেরও বিষণ্ণতা ও মানসিক সমস্যাদি জয় করতে সহায়ক হয়। জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নিজেরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। আমাদের অসুখ হয়, দুর্ঘটনা হয়, মৃত্যু হয়, নতুন সন্তান জন্ম হয়- আমরা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তা পরিমাণে খুব সামান্যই। বাকিটা থাকে অনিশ্চয়তা। ধর্ম বিশ্বাস এক্ষেত্রে মানুষের টিকে থাকার জন্য দারুণভাবে সহায়ক হয়। বিষণ্ণতার প্রভাবে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়ে যায়। ধর্মে আত্মহত্যাকে বড় ধরণের অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আত্মহত্যার জন্য পরকালে কঠিন শান্তির বিধান আছে। ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা কম। কাজেই ধর্মাশ্রয়ী হোন ও স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন, তাতে কল্যাণ নিহীত আছে।
কিছু সময়ের জন্য কেটে পড়ুন
যদি কোন কারণে আপনি খুব বেশী চাপে পড়ে যান, খুব বেশী রেগে যান বা দুঃখিত হয়ে যান তবে কিছু সময়ের জন্য কেটে পড়ন। সময় নিন। মন শান্ত হলে তখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন।
নতুন ভাবে ভাবুন
যখন খুব কষ্টের মধ্যে সময় পার করছেন তখন পুরো ঘটনাটা নতুন ভাবে দেখুন। বড় পরিসরে চিন্তা করুন। এটা ঠিকই আপনার খারাপ সময় যাচ্ছে। কিন্ত এর ফলে শেষ পর্যন্ত কতটা খারাপ হবে। জীবন কি থমকে যাবে? সবচেয়ে খারাপ কি হতে পারে? তখন আপনি কি করতে পারেন? এমনটা কি আপনার জীবনে বা অন্যদের জীবনে আর কখনো হয়নি? এভাবে দেখবেন পরিস্থিতি যতটা মারাত্মক ব্যাপার ভাবছিলেন এখন আর ততটা মারাত্মক বলে মনে হচ্ছে না।
রাগ পুষে রেখে লাভ নেই
রাগ হলো জলন্ত কয়লার মতো। আপনি যার উপরই রাগ পুষে রাখুননা কেন, তা আপনাকেও দহন করে। আপনি কি কারো উপর রেগে আছেন? আপনি নিজের উপরই রেগে নেইতো? আপনার রাগটা অনুভব করুন। মনে মনে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারলে রাগটার সমাধান হতো তা চিন্তা করুন। এমন কারো উপর রেগে আছেন যাকে হয়তো এগুলো করা সম্ভব নয়। অথবা সে হয়তো মরেই গেছে। সম্ভব হলে তাকে ক্ষমা করে দিন। সে হয়তো আপনার ক্ষমার যোগ্য নয়। তবুও মনে মনে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারলে আপনার নিজের মনটা ভালো থাকবে। তাকে ডেকে ক্ষমা করার বিষয়টি জানানো জরুরী নয়। মনে মনে তাকে মাফ করে দিলেই হলো। কোন অপরাধই মাফের অযোগ্য নয়। ক্ষমা করবেন নিজ গুণে। আপনার মন থেকে কষ্টের বোঝাটি নেমে যাবে। আপনি হালকা হবেন। চাইলেই কিন্ত মন থেকে ক্ষমা নাও আসতে পারে। ক্ষমা করার নিয়্যত করুন। একসময় আপনার মন প্রস্তত হবে ও আপনি ক্ষমা করতে সক্ষম হবেন।
ভাব বিনিময়ের দক্ষতা ঠিক রাখুন
যা বলতে চান তা পরিষ্কার করে বলুন। অন্যরা তা বুঝেছে কিনা তাও জেনে নিন। অনুমান না করে জিজ্ঞেস করলেই অন্যরা আপনার কথা বুঝেছে কিনা তা বুঝতে পারবেন। যদি বা বুঝে আবার ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে বলুন। না বুঝলে তারা যা ব্যখ্যা দেয় তা মেনে নিন। সাদা কথা সাদা ভাবে নিন। কথার মানে দাড় করাবেননা। ভাল ভাব বিনিময় বা যোগাযোগ দক্ষতা থাকলে জীবনের অনেক সমস্যা মিটে যায়।
মনের মাঝে আশা জাগিয়ে রাখুন
প্রতিদিন শেষে ভাববেন আগামী দিনে নিশ্চয় কিছু মঙ্গল নিহীত আছে। যদি বিশ্বাস না হয় তবুও এভাবে ভাবার চেষ্টা চালিয়ে যান। একসময় বিশ্বাস হতে শুরু করবে। যখন পরিস্থিতি খারাপ হয় তখনো আশা রাখুন। ভবিষ্যতের গর্ভে কি লুকিয়ে আছে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ তা জানেনা। আপনার মন বলছে খারাপ সময় আসছে। ভাল সময়য়ওতো আসতে পারে। আকাশের কথা চিন্তা করুন। আকাশে কখনো থাকে মেঘের আনাগোনা। কিন্ত আকাশের নীল ঐ মেঘের পিছনে আছে ঠিকই। মেঘ কেটে গিয়ে আবার উঠবে সূর্য। সুখকে উপভোগ করুন। দুঃখকেও ভয় পাবেন না। দুটোই সত্য।
নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন
বিষণ্ণতা হলে মন একদম দমে যায়। কারো সাথে দেখা করার ইচ্ছা করেনা। দুর্বল লাগে। কিছু করতেও ইচ্ছা হয়না। ফলে এসময় মানুষ নিজেকে একদম গুটিয়ে নেয়। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে নেতিবাচক চিন্তা করে। এসময় এর উল্টোটি করাই বেশী প্রয়োজন। দিনের বেলায় কিছুতেই বিছানায় যাবেন না। কাজ না থাকলেও আত্মীয়-বন্ধুদের সাথে দেখা করুন, কথা বলুন। বাড়ির বাইরে চার/পাচ ঘণ্টা করে সময় কাটান। আপনার ব্যস্ততা বাড়লে নেতিবাচক চিন্তা করার সময় কেটে যাবে। দুই একদিন ব্যস্ত থেকেই ফল আশা করবেন না। সময় নিন। টানা মাস খানেক দারুণ ব্যস্ত থাকুন ফল পাবেন। বিষণ্ণতা বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
নিজের উপর বড় বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করবেননা। বড় ধরনের চাহিদা নির্ধারণ করলে যদি তা পুরণ করতে না পারেন তবে আপনার মন খারাপ হয়ে যাবে। এজন্য ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে সেগুলো পুরণের মধ্যমে ক্রমান্বয়ে বড় লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ারই উত্তম। তাতে অর্জনও বেশী হয়, আর মনও ভালো থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুমান
রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হলে তা পর্যাপ্ত হবে। তবে সবার ঘুমের চাহিদা সমান হয়না। ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বড় ধরণের প্রভাব ফেলে। ঘুমালে শরীর ও মন দুইই সুস্থ থাকে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে মানসিক রোগের ঔষধ খেলে ঘুম বেড়ে যায়। ঘুম মানুষকে মানসিক অসুবিধাগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
রিল্যাক্সেশন করতে শিখুন
আজকাল মেডিটেশন আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মেডিটেশনের মাধ্যমে রিল্যাক্স হওয়া যায়। এই রিল্যাক্সেশনের মাধ্যমে বিষণ্ণতা বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অনেক ভাবেই রিল্যাক্স হতে পারেন।
কল্পনার মাধ্যমে রিল্যাক্সেশনঃ আপনার যদি ভাল কল্পনাশক্তি থাকে তবে চোখ বন্ধ করে কোন কল্পনা করতে পারেন। যদি দিনে বিশ মিনিট করেও কল্পনা করেন তবে আপনি যথেষ্ট ভাল মাত্রায় রিল্যাক্স হতে পারবেন। এমন কোন বিষয় নিয়ে কল্পনা করুন যার অভিজ্ঞতা আপনার আছে। যেমন- হয়তো অতীতে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে আপনার ভাল লেগেছে। এখন আবার সেই কল্পনাটি করুন। কল্পনার সময় আপনি একা নিজেকে কল্পনা করাই উত্তম। সাথে কাউকে কল্পনা না করাই ভাল। নাহলে আপনার খারাপ কোন অভিজ্ঞতা মনে পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। যদি কোন কারণে আপনার ভাল লাগছেনা এমন কল্পনা মনে আসে তবে ভালো লাগার কল্পনায় মনটি সরিয়ে নিন। যদি কল্পনা ঠিকমতো করতে না পারেন তবে হতাশ না হয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে চেষ্টা করুন। একসময় কল্পনা করতে স্বক্ষম হবেন। কল্পনার সময় কল্পনায় দেখার পাশাপাশি স্পর্শ অনুভব করা ও শোনার চেষ্টা করুন। যেমন- সমুদ্র সৈকতে আপনি হেঁটে বেড়াচ্ছেন এমন কল্পনা করলেন। দেখুন যেন আপনার পায়ের কাছে রাশি রাশি সাদা ঢেউ এসে ভেঙ্গে পড়ছে। শোনার চেষ্টা করুন, ঢেউয়ের গর্জন, শুনুন বাতাসের শব্দ। পায়ের নীচে ভেজা বালির স্পর্শও নিতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন সবার কল্পনাশক্তি সমান হয়না। কল্পনার মাধ্যমে রিল্যাক্স না হতে পারলে দুঃখিত হবার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে আপনি ‘মাস্কুলার রিল্যাক্সেশন’ করতে পারেন।
মাস্কুলার রিল্যাক্সেশনঃ এই রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামে শরীরের পেশীগুলো পর্যায়ক্রমিক ভাবে শক্ত করা হয় ও শিথীল করা হয়। প্রতিটি পেশী পাঁচ সেকেন্ড করে শক্ত করা হয় ও পরবর্তীতে তার দ্বিগুণ পরিমাণ সময় ঐ পেশী শিথীল করা হয়। শিথীল করার সময় গণনার প্রয়োজন নেই। শুধু মাংসপেশীগুলো যথাযথভাবে শিথীল করলেই হলো।
শ্বাস-প্রশ্বাসের রিল্যাক্সেশনঃ শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও শরীর রিল্যাক্স করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার পর তা পেটে দুই তিন সেকেন্ড আটকে রেখে আবার ধীরে ধীরে তা ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ভাবে পনেরো/বিশ বার শ্বাস নিলেই হলো। দিনে বেশ কয়েকবার এভাবে অভ্যাস করতে হবে।
মাদক ও অ্যালকোহল কে না বলুন
বিষণ্ণতার সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে কেউ কেউ মাদক ও অ্যালকোহলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এমনটা করবেননা। নেশা আপনার বারটা বাজাবে। এটি স্বল্পসময়ের জন্য আপনার মন যদিও ভাল করেও, অচিরেই এমন অবস্থা হবে যে নেশা ছাড়া চলতেই পারছেননা। তখন নেশা আর মন ভাল করবেনা। খারাপ লাগা এড়াতে আপনাকে নেশা নিতে হবে। নেশা ছাড়াও বিষণ্ণতা মোকাবেলার অনেক ভাল বুদ্ধি আছে।
নতুন কিছু শিখুন, প্রকৃতি ও ঘনিষ্ঠ জনের সংস্পর্শে থাকুন
গবেষণায় দেখা গেছে – নতুন কিছু শিখলে মন ভালো হয়। আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। কাজেই নতুন কিছু শিখুন। গবেষণায় আরও জানা গেছে যখন মানুষ প্রকৃতির সংস্পর্শে যায়, যেমন- পোষা প্রাণী, গাছ, পার্ক, বাগান ইত্যাদির সংস্পর্শে আসে তখন মন ভাল থাকে। আপনিও যেতে পারেন। পার্কে নিয়মিত হাঁটুন। আবার আত্মীয়-বন্ধুদের সাথে, ঘনিষ্ঠজনের সাথে প্রাণখুলে কথা বলুন। আড্ডা দিন। যতটা পারা যায়, সামাজিক বন্ধন রক্ষা করুন। নতুন বন্ধন গড়ে তুলুন। আপনার আনন্দ-বেদনার কথা বলুন। মন হালকা হয়ে যাবে। যারা কষ্টের কথা মনে চেপে রাখেনা, শেয়ার করে, তাদেরকে বিষণ্ণতা ততটা ক্ষতি করতে পারে না। এই কৌশল প্রয়োগ করে বিষণ্ণতা বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
নিজেকে সময় দিন
নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন- একান্তই নিজের জন্য। মোবাইল বন্ধ করুন, ফেসবুকে না বসে নিজেকে কি ভাল লাগে তা করুন। কিছু লিখুন। গান শুনন। হাঁটুন। যা ভাল লাগে তাই করুন। আপনার যদি সময়ের খুব অভাব থাকে তবূও সময় দৈনিক দশ-পনের মিনিট হলেও ব্যয় করুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন এটি যাতে আপনার বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হয়।
মেনে নিন ও শরীর চর্চা করুন
যে সমস্যা সমাধানযোগ্য তা সমাধানে উদ্যোগী হোন। যেগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই সেগুলো মেনে নিতে চেষ্টা করুন। নিয়মিত পর্যাপ্ত শরীর চর্চা করুন। ভারসাম্যপূর্ণ খাবার ও শরীরচর্চা আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।
উপরের এই কৌশল প্রয়োগ করে বিষণ্ণতা বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি এইসব কৌশলে ততটা কাজ না হয় তবে দেরি না করে মানসিক চিকিৎসা নিন। মানসিক রোগের ডাক্তারেরা ঔষধের মাধ্যমে বিষণ্ণতার চিকিৎসা করে থাকেন। এছাড়া ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে বিষণ্ণতার চিকিৎসা দেন।
লেখকঃ মোঃ জহির উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।