Magical word Thank-You.jpg

যোগাযোগের ৪টি জাদুকরি শব্দ

সফল যোগাযোগের ৪টি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড

শিশুদের কথা বলতে শেখার সময় কিছু ম্যাজিক্যাল শব্দ শেখানো হয়, যেমন- অভিবাদন- সালাম,আদাব, নমস্কার, অনুগ্রহ/দয়া করে, ধন্যবাদ, এবং দুঃখিত। এই শব্দগুলো শিশুদের ভালো আচরণ, সফল যোগাযোগের দক্ষতা, ও মানুষকে সম্মান করতে শেখানো হয়। কিন্তু বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ার যুগে প্রায়ই এই শব্দগুলো আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ যোগাযোগের সফল ও কার্যকর দক্ষতা হলো এই ম্যাজিক্যাল শব্দগুলো। এই দক্ষতা কর্মক্ষেত্রে সফট স্কিল নামে পরিচিত। তাই আসুন জেনে নেই সেই ম্যাজিক্যাল শব্দগুলো।

১) অভিবাদন – সালাম / আদাব / নমস্কার

পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের জন্য অভিবাদন সর্বোত্তম আচরণ। মুসলিমরা সলাম দিয়ে থাকেন এবং ইসলামে সালামের গুরুত্ব অনেক। ইসলামে চেনা-জানা, ছোট-বড় সকলকে সালাম দিয়ে অভিবাদনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও অভিবাদনের জন্য স্ব স্ব রীতি অণুসরণ করা হয়। যেমন- নমস্কার, আদাব ইত্যাদি। এসমস্ত অভিবাদন বিনিময়ের মাধ্যমে একদিকে অপরকে যেমন স্বাগত জানানো যায় তেমনি অন্য দিকে পারস্পরিক পরিচিতি গড়ে ওঠে। মানুষের সাথে মানুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায় এবং আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে  উঠে। তাই অপরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কুশল বিনিময়ে অভিবাদনের মাধ্যমে শুরু এবং শেষ করা যেতে পারে।

 ২) অনুগ্রহ / দয়া করে

কারো কাছে  আপনি সাহায্য চাচ্ছেন অথচ অনুগ্রহ / দয়া করে শব্দের প্রয়োগ করেননি তা কেমন করে হয়। বিনয়ের সাথে দয়া করে একটু দেখতে পারি। প্লিজ আমি এটা নিতে চাই। অনুগ্রহপূর্বক আমাকে জায়গা দিবেন। এভাবে কারো প্রতি আচরণ করতে গিয়ে আমরা যদি ‘অনুগ্রহ / দয়া করে’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারি তাহলে এর মাধ্যমে আমাদের আচরণের নমনীয়তা ও ভদ্রতা প্রকাশ পায়। যার ফলে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হয়। একবার ভাবুন আপনার বস আপনাকে যদি বলে এটা করুন, ওটা করুন তাহলে কেমন লাগবে? আর যদি বলে “এ কাজটা একটু করে দিন দয়া করে” তাহলে শুনতে কেমন লাগবে। ব্যপারটা এমনই ম্যাজিক্যাল। কারো কাছ থেকে কাজ করে নিতে চাইলে এই ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড ব্যবহার করে দেখুন, কেমন কাজ হয়।

৩) দুঃখিত

কারো কাছে কোন ভুল করলেই অথবা অন্যদের অসুবিধায় ফেলে দিলে  আমরা যেন বিনয়ের সাথে আমাদের কর্মকান্ডের জন্য তাদের কাছে দুঃখ  (sorry) প্রকাশ করি। এর জাদুকরী উপাদান হলো – এই দুঃখ প্রকাশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। তাছাড়া যে কোন ছোট-খাটো ভুলের জন্য দোষ স্বীকার করা মহত্তের লক্ষণ। সেই সাথে ভুল স্বীকারকারির প্রতি বিশ্বাস্ততা তৈরি হয়। দুঃখ প্রকাশ করা মানে ছোট হয়ে যাওয়া নয়, বরং উদার মনের পরিচয় দেওয়া। তা ছাড়া একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে “একমাত্র সাহসী ব্যক্তিরাই কেবল ভুল স্বীকার করতে জানে”। একই সাথে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে শুরুতে আমার দুঃখিত(Excuse me) দিয়ে  কথা শুরু করতে পারি। কাজেই এই ম্যাজিক্যাল শব্দ নিজের বিনয়ী, বিশ্বাসী, ও সাহসী ব্যক্তিত্বের পরিচয় ফুটিয়ে তোলে।

৪) ধন্যবাদ

একে বলা হয় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের অন্যতম ভাষা। মানুষের জীবনে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পারা-প্রতিবেশী, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সমাজের অনেকের কাছে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ। তাই সমাজের যে কোন পর্যায়ের ব্যক্তি-বর্গের সাথে আমাদের চাহিদা নিবৃত্তির সাথে সাথে আমরা যেন তাদের প্রতি যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ধন্যবাদ জানাই। যেমন ধরা যাক-  অফিসের কাজ সম্পন্ন করার পর, ‘বস’ যদি আপনাকে বলে “থ্যাংক ইউ”, তাহলে তার অনুভুতিটা কেমন হবে ভেবে দেখুন তো। বসরা যদি তার অধিনস্তদের এভাবে সম্মান দেখান, তার ইতিবাচক প্রভাব অধিনস্তদের মনে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

পরিশেষে, বলা যায়, উপরোক্ত এই সাধারণ শব্দগুলোর ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের যোগাযোগ দক্ষতাকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করতে পারি। আসুন এই যোগাযোগের ম্যাজিক্যাল শব্দগুলো সঠিক ভাবে প্রয়োগ করি যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করি।

লেখক: মোহাম্মদ আফজাল হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক,  মনোবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

1 thought on “যোগাযোগের ৪টি জাদুকরি শব্দ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.